একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র সোনার বাংলার নিজস্ব মানচিত্র বিনির্মানে শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ অবিস্মরণীয়। তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে রাখতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সরকার মুক্তি যোদ্ধাদের সম্মাননা ও শহীদ পরিবারের প্রতি যে ভাতা ব্যবস্থা চালু করেছেন তা সত্যিই দৃষ্টান্ত।
তবে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি না পাওয়ার বিষয়টি বড় দুঃখজনক।মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে আজ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত ৭৫ বয়সী মোঃ হোসেন আলী।
মোঃ হোসেন আলী পিতা মৃত এবারত আলী ব্যাপারী।গ্রামের নাম কাঁচিচর ইউনিয়ন ভোগডাঙ্গা,কুড়িগ্রাম সদর।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ২৫ বছরের টগবগে যুবক ছিলেন। বাবা মায়ের আদরের ছেলে হোসেন আলী দেশের জন্য জীবন বাঁজি রেখে যুদ্ধে নাম লেখান ভূরুঙ্গামারী সীমান্ত ঘেষা ভারতীয় ক্যাম্প টাপুর হাট সেন্ট্রাল ইয়ুথ ক্যাম্পে। ১৯৭১ সালের জুন মাসে স্থানীয় সেক্টর কমান্ডার মোঃ বশির উদ্দিন চৌধুরী ও সেক্টর কমান্ডার খাদেমুল বাসারের অধীনে যুদ্ধের প্রশিক্ষন গ্রহন ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার বিশদ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,এক সঙ্গে অনান্য সহ প্রশিক্ষনার্থী মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পেলেও তিনি এখনো পড়ে আছেন স্বঘোষিত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়।বর্তমান সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানিয়ে একান্ত কথাগুলো ব্যাক্ত করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে তিনি যা বলেন-
মুক্তি বাহিনীতে নাম লেখাঃ ১৯৭১ সালের জুন মাস সারা দেশে পাক সেনাদের অত্যাচার, ধর্ষন,নিপীড়ন তুঙ্গে।ওই সময় যুবক বয়সীদের তারা ধরে নিয়ে মেরে ফেলত।আমি সে সময় ২৫ বছরের যুবক।ওই সময় আমার বাড়ি থেকে কোরমোষ পেয়াদা আমাকে নিয়ে যায় ধরলা নদীর সিএন্ডবি ঘাট এলাকায়। সেখানে আমি আর রব্বানীর দ্বারা নদী পারাপারের নৌকাগুলো ভেঙ্গে ফেলায় মেজর নওজেশ।দুদিন থাকার পর পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার খবর পেয়ে মেজর নওজেশের সহযোগিতা প্রশিক্ষন নিতে চলে যাই ভারতের টাপুর হাট ইয়ুথ ক্যাম্পে।সেখানে মেডিকেল চেক করার পর শুরু হয় আমাদের প্রশিক্ষন।
মেডিক্যাল ক্যাম্প ও সহযোদ্ধাদের প্রতি অনুরাগঃ প্রত্যেক জনের সাথে ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধু সুলভ আচরন। মেডিকেল ক্যাম্পে আমার এলাকার একজন ভাই বদিয়ার রহমান চিকিৎসক হিসাবে টাপুর হাট ক্যাম্পে কর্তব্যরত ছিলেন। এছাড়াও শামছুল হক নামের একজন সহ প্রশিক্ষনার্থী ছিল আমার যুদ্ধকালীন সময়ের অন্যতম সহযোদ্ধা।
প্রশিক্ষনে কি কি শিক্ষা গ্রহন করেছিলেঃআমাদের ক্যাম্পের অধিনস্ত ৬টা কোম্পানি নামে বিভক্ত ছিল আলফা,ডাঙ্গা, চার্লি আইএফ ডি।আমি আলফা কোম্পানিতে প্রশিক্ষন গ্রহন করেছি। আমাদের প্রশিক্ষক ছিলেন ভারতীয় শিব সেনা।আমার অস্ত্র ছিল থ্রী নট থ্রী বডি নম্বর ছিল ১০০/৫৮ ।আমি মোটামুটি সবগুলো অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষন নিয়েছি।
প্রাপ্তি ও প্রত্যাশাঃ আমার প্রশিক্ষন সময় ছিল প্রায় জুন জুলাই এ।প্রশিক্ষনের পর সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে পারি নাই।তবে হানাদার বাহিনীর আসার রাস্তা,কালভার্ট ভেঙে তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছি।সর্বশেষে রংপুরে অস্ত্র জমা দিয়ে এসেছি।তবে দূর্ভাগ্য অস্ত্র জমা দেয়ার কাগজটি আসার পথে হারিয়ে ফেলেছি। এ কারনে মুক্তিযোদ্ধা গেজেট প্রকাশ হওয়ার ২০০৯ সাল থেকে স্বীকৃতি পেতে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়া দৌড়ি করে পেরেশান হলাম।মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের নানান অবদান থাকার পরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাচ্ছি না।গেজেটে আমার নাম আছে কিন্তু কিছু মানুষের চক্রান্তে যুদ্ধ করেও সমাজে তাছিল্যর পাত্র হয়ে পড়ে আছি।আমার বয়স হয়েছে কোন দিন যেন ওপারের ডাক আসে।মৃত্যুর আগে স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে পরিচয়টা যেন রেখে যেতে পারি এই আমার আশা।
সহ প্রশিক্ষনার্থী স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক বলেন,হোসেন আলীসহ একই ক্যাম্পে যুদ্ধের প্রশিক্ষন ও অস্ত্র জমা দিয়েছি।আমি মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও ভাতা পাচ্ছি।তবে কি কারনে হোসেন আলী তালিকাভুক্ত হয় নাই,কিংবা সম্মাননা পাচ্ছে না তা জানি না।
টাপুরহাট ইয়ুথ ক্যাম্পের তৎকালীন চিকিৎসক বীর মুক্তিযোদ্ধা বখতিয়ার জানান,মুক্তিযুদ্ধের সময় হোসেন আলী আমার ক্যাম্পে ছিলেন।আমি নিজেই চিকিৎসা দিয়েছি।ক্যাম্পে রান্না কাজসহ অনান্য কাজ করেছিলেন তিনি।ওই সময় তার পায়ে ফোঁড়া হয়েছিল।চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলিছিলাম।
সাবেক জেলা কমান্ডার মোঃ সিরাজুল ইসলাম টুকু বলেন,মোঃ হোসেন আলীকে আমি চিনি।হোসেন আলী মুক্তিযোদ্ধা ঠিকই।তবে বড় মাপের মুক্তিযোদ্ধা না।উনি ওই সময়ে এতিমখানায় ছিলেন সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধে গেছেন।তবে এখন সে জামাত শিবির করে