সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি গ্রামে যৌতুকের দাবিতে সোনিয়া খাতুন (২১) নামের এক গৃহবধুকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পাবনার বেড়ার পোর্ট এলাকায় স্বামী শরিফ আত্মহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে। গত রবিবার (২৯ নভেম্বর) শাহজাদপুরের কৈজুরি গ্রামে হত্যার ঘটনা ঘটে এবং পহেলা ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেড়া উপজেলার পোর্ট এলাকায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
আত্মহত্যার ঘটনায় আহত হওয়া শরিফকে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। নিহত সোনিয়া শাহজাদপুর উপজেলার পুর্ব চর কৈজুরি গ্রামের মোহাম্মদ সৈয়দ মোল্লার মেয়ে। ঘটনার পর থেকেই সোনিয়ার স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজন পলাতক ছিলো। নিহতের পরিবার সুত্রে জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী পাথালিয়া পাড়ার মোহাম্মদ সামাদ ব্যাপারীর ছেলে শরিফের সাথে চার মাস আগে পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়।
সোনিয়া এবং শরিফের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। বিয়ের পর সোনিয়ার স্বামী ও তার শ্বশুর শাশুড়ী যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে আসছিল। রবিবার (২৯ নভেম্বর) রাতের কোন এক প্রহরে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরদিন সকালে সোনিয়ার শ্বশুর মোবাইল ফোনে জানায় সোনিয়া অসুস্থ হয়েছে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। পরে স্থানীয় চর কৈজুরি বাজারে একটি ভ্যানের উপর সোনিয়ার লাশ পায় বলে জানান তারা। শাহজাদপুর থানা পুলিশ খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে পাঠায়।
ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার পহেলা ডিসেম্বর বিকেলে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হলে সন্ধ্যায় লাশ দাফন করা হয়। নিহতের ভাই আশরাফুল ইসলাম বাদি হয়ে শাহজাদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেড়া পোর্ট এলাকায় স্বামী শরিফ আত্মহত্যার জন্য একটি চলন্ত ট্রাকের নিচে ঝাপ দেয় বলে স্থানীয় সুত্রে জানা যায়। পরে স্থানীয়রা শরিফকে উদ্ধার করে স্থানীয় বেড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। ভর্তি করার পর শরিফ নাম এবং গ্রামের নাম বলার পর অজ্ঞান হয়ে পরে। শরিফের পরিচয় চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ঘন্টা খানেক পর আহত শরিফের সব তথ্য পাওয়া যায়।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ জাহিদ হাসান জানান, রোগীর অবস্থা আশংকাজনক। তার বাম পা থেঁতলে গিয়ে হাড় ভেঙ্গে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো বুধবার ২ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্তও তার কোন স্বজন আসেনি। আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। বেড়া মডেল থানাকেও জানানো হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে বলে জানান তিনি।
বেড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কাসেম বলেন, শাহজাদপুর থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। শাহজাদপুর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আব্দুল মজিদ জানান, সোনিয়া হত্যা মামলার দুইজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামি শরিফ আহত হয়ে বেড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে বলে আমরা খবর পেয়েছি এবং সেখানে আমাদের পুলিশ পাঠিয়েছি। কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।