তথা কথিত আহলে হাদিসদের উৎপত্তি হয়েছে বৃটিশ শাসনামলে ভারতবর্ষে। ইতি পূর্বে এদের কোন অস্তিত্বই ছিলোনা। হিন্দুস্থান তথা ভারত উপ’মহাদেশে ইসলাম আগমনের পর থেকে বৃটিশ শাসনের পুর্ব পর্যন্ত সেখানকার সকল অধিবাসীই ছিল হানাফি মাযহাবের অনুসারী। আহলে হাদিসদের অপর নাম হচ্ছে লা-মাযহাবী বা গাইরে মুকাল্লিদ। এরা কোন মাযহাব বা ইমাম মানে না। বরং তারা পুর্ববর্তী ইমামদের গালি দিয়ে থাকে এবং তাদের বিরুদ্ধে এ বলে অপবাদ দিয়ে থাকে যে, তারা নাকি কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা করে ফিক্বাহ তৈরি করেছেন। নাউজুবিল্লাহ! আহলে হাদিস নামে নব উদ্ভাবিত এ দলটির প্রতিষ্ঠাতার নাম মৌলভি আব্দুল হক বেনারসি। (মৃত্যু ১২৭৬ হিজরি)। সে ছিলো আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যেদ আহমাদ শহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মুজাহিদীন দল থেকে বহিস্কৃত ব্যক্তি। এই লোকটিই সর্বপ্রথম চার মাযহাবের ইমামগনের তাকলিদ অস্বীকার করে নতুন একটি ফিরকার সুত্রপাত ঘটায় এবং নিজের মতের প্রতি মানুষদেরকে আহবান জানাতে থাকে। সে সকল মাযহাবের সম্মানিত ইমামগনের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে ও ইমামগনের বিভিন্ন মাসআলার ভুল ধরতে থাকে এবং তা জন’সাধারণের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে থাকে। সে একথা বলে স্লোগান দিতে থাকে যে, কোরআন এবং সহীহ হাদিস ছাড়া অন্য কিছু মানিনা, মানব না।তার এ কথার বাহ্যিক রুপ খুব সুন্দর মনে হলেও এর অন্তর্নিহিত ভেদ এবং এর গোপন উদ্দেশ্য খুব একটা ভালো নয়। কারণ, সে তার এ কথার মাধ্যমে ইসলামী শরীয়াতের অপর দুটি উৎস তথা ইজমা ও কিয়াসকে অস্বীকার করতো। অথচ ইজমা এবং কিয়াস ইসলামী শরীয়াতের উৎস হওয়ার বিষয়টি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহীহ হাদিস দ্বারাই প্রমানিত দুটি বিষয়। সুতরাং ইজমা এবং কিয়াসকে অস্বীকার করা মানেই হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ সংক্রান্ত সহীহ হাদীসকে অস্বীকার করা। বিষয়টি যদি এমনই হয় তাহলে আহলে হাদীসরা তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহীহ হাদীসকেই অস্বীকার করলো। তাহলে তারা সহীহ হাদীস মানলো কিভাবে? আর তারা আহলে হাদীসই বা হলো কিভাবে। এ ধরনের আরও অসংখ্য ভ্রান্ত আকীদা ও কর্মকাণ্ডের জন্যে সাইয়্যেদ আহমাদ শহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি আহলে হাদীসদের ইমাম ও উদ্ভাবক মৌলভী আব্দুল হক বেনারসিকে স্বীয় দল থেকে ১২৪৬ হিজরিতে বহিষ্কার করেন। হারামাইন শরীফাইন তথা মক্কা ও মদিনার সকল উলামায়ে কিরাম তার জঘন্য কর্মকাণ্ডের জন্যে তাকে হত্যা করার ফতোয়া পর্যন্ত প্রদান করেন। কিন্তু বৃটিশ সরকারের ছত্র’ছায়ায় সে কোনভাবে বেঁচে যায়। মৌলভী আব্দুল হক বেনারসি সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর দল থেকে বহিস্কৃত হয়ে ভারত’বর্ষে সর্বপ্রথম আহলে হাদীস বা লা-মাযহাবী নামক দলটির সুচনা ও গোড়াপত্তন করে। সে ভারতের বেনারসে অবস্থান করেই তার মিশনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। আর তার এই ভ্রান্ত মতবাদ ও আক্বীদা ব্যাপক’ভাবে প্রচারের লক্ষে “জামিয়া সালফিয়া বেনারস” নামে সেখানে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। যা আজও পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে। পরবর্তীতে অবশ্য আব্দুল হক বেনারসি কতৃক প্রতিষ্ঠিত “আহলে হাদিস” নামক দলটিকে সাংগঠনিক ও সংঘবদ্ধরুপে একটি অগ্রসরমুখী বড় মিশন হিসেবে মানুষের সামনে তুলে ধরে মাওলানা সাইয়্যেদ নযীর হুসাইন দেহলভী। সে রচনা, লেখনী, বক্তৃতা’সহ নানাভাবে এ দলটিকে পুর্ন রুপদান করে। বৃটিশ শাসনামলে তারা বৃটিশদেরই ছত্র’ছায়ায় নিজেদের মিশন অতি দ্রুত’গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। ফলে অতি অল্প দিনের মধ্যেই তাদের মিশনের দাওয়াত গোটা ভারত’বর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য তারা নিজেদের মত’বাদকে এতো প্রচার করেও খুব বেশি লোককে নিজেদের মুরিদ করতে পারেনি। খুব অল্প’সংখ্যক লোকই তাদের এ দাওয়াতে সারা দিয়েছিলো।কিন্তু তাদের সেই অল্প’সংখ্যক মুরিদই গোটা ভারত’বর্ষে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছিল।যেমন বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশের অবস্থার কথাই ভাবুন, বাংলাদেশে কয়জন আহলে হাদিস আছে? হাতে গোনা অল্প কয়েকজন। অথচ তাদের কথাবার্তা ও ভেষ-ভুষায় মনে হয় যে,বাংলাদেশের সবাই আহলে হাদিস হয়ে গিয়েছে। কথায় বলে অল্প’বিদ্যা ভয়ংকর। তারা কতিপয় জেনারেল শিক্ষিত ও বিত্তশালী মানুষকে মুরীদ বানিয়ে তাদের দ্বারাই নিজেদের মতাদর্শ প্রচার করছে। বাংলাদেশের গভীর জ্ঞানের অধিকারী বড় বড় আলিমগণ কিন্তু তাদের মুরীদ হননি বা তাদের মতাদর্শকে সমর্থনও করেননি। (লেখক হাফেজ মাওলানা মুফতি কামাল হোসাইন রহমানী, ট্রিপল এম,এ)